যতদূর মনে পরে, ওটা সকাল ৬:৩৫-এর তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস ছিল। সেদিন শনিবার ছিল, পরের দিন ফুটবল বিশ্বকাপের
ফাইনাল ছিল, আর কোন স্পেশাল দিন ছিল কিনা মনে পরছে না যার জন্য ট্রেনে প্রচুর ভিড়
ছিল! মানে,নিজেদের রিজার্ভ করা সিট এ বসার জন্য অন্য জনের পারমিশন (permission) নিতে হয়েছিল। শুনেছিলাম বিহারীরা নাকি
এরকম করে, মানে অন্যের রিজার্ভ করা সীটে জোর করে বসে পরে। সেদিন বাঙালিরা
বিহারীদের পরিচয় দিয়েছিল।
প্রায় সাড়ে তিন বা চার ঘণ্টা পর দিঘা স্টেশনে পৌঁছালাম। রিসোর্টে রুম আগে থেকেই বুক করা ছিল।স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে তাজপুরের দিকে এগোচ্ছি আমরা। হটাৎ দেখি রামনগর স্টেশন। আরে,এখানে নেমে পরলেই তো ভালো হত ? সবার একই প্রশ্ন ! আসলে, রামনগর স্টেশনের পরে দিঘা স্টেশন। সময় এবং টাকা দুটোই বেশী গেল। এদিকে পকেট প্রায় গড়ের মাঠ! সবারই মনের এক অবস্থা, এই যাত্রা খরচবহুল হবে! রিসোর্টের রুম ভাড়াও বেশ খানিকটা বেশী। যাকগে, সমুদ্র দেখার ইচ্ছে আর বদ্ধ কৌটো থেকে কিছু সময়ের মুক্তি আমাদের কিছুটা শান্ত করছিল। রিসোর্টে পৌঁছে দেখলাম, বেশ ফাঁকা জায়গা। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু গাছপালা ফাঁকা মাঠ আর জলাশয় (মাছের ভেড়ি)। সমুদ্রের অস্তিত্বের কোন চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক ঠাক জায়গায় এলাম তো? একজন আরেকজন কে জিজ্ঞাসা করলাম।
প্রায় সাড়ে তিন বা চার ঘণ্টা পর দিঘা স্টেশনে পৌঁছালাম। রিসোর্টে রুম আগে থেকেই বুক করা ছিল।স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে তাজপুরের দিকে এগোচ্ছি আমরা। হটাৎ দেখি রামনগর স্টেশন। আরে,এখানে নেমে পরলেই তো ভালো হত ? সবার একই প্রশ্ন ! আসলে, রামনগর স্টেশনের পরে দিঘা স্টেশন। সময় এবং টাকা দুটোই বেশী গেল। এদিকে পকেট প্রায় গড়ের মাঠ! সবারই মনের এক অবস্থা, এই যাত্রা খরচবহুল হবে! রিসোর্টের রুম ভাড়াও বেশ খানিকটা বেশী। যাকগে, সমুদ্র দেখার ইচ্ছে আর বদ্ধ কৌটো থেকে কিছু সময়ের মুক্তি আমাদের কিছুটা শান্ত করছিল। রিসোর্টে পৌঁছে দেখলাম, বেশ ফাঁকা জায়গা। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু গাছপালা ফাঁকা মাঠ আর জলাশয় (মাছের ভেড়ি)। সমুদ্রের অস্তিত্বের কোন চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক ঠাক জায়গায় এলাম তো? একজন আরেকজন কে জিজ্ঞাসা করলাম।
সমুদ্র এখান থেকে কত দূরে, রিসেপশনে জানতে চাওয়ায় বলল, "বেশী দূর নয়, দশ পনেরো
মিনিট লাগবে, হেঁটে বা একটা টোটো ভাড়া করলেই হবে। আমাদের নিজেদের টোটো,কখন বেরবেন
আগে থেকে ফোন করে জানিয়ে দিলেই হবে"। রিসোর্টের পরিবেশ বেশ মনোরম। আরও বড় করে তৈরি হচ্ছে, সাজাচ্ছে চারিদিক।
ফ্রেশ হবার পর খাওয়া দাওয়া সারলাম সবাই মিলে। কিছুক্ষণ আড্ডা চলল। একটা টপিকেই কথা চলছিল, টাকা খরচ হয় হোক, সমুদ্র হতাশ না করলেই ভালো। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে, ৩:৩০ টের দিকে টোটো নিয়ে বেরলাম সমুদ্রের খোঁজে। বেশ খানিকটা আশঙ্কা নিয়ে যাচ্ছি। কতদূরে যেতে হবে জানি না, জায়গাটা কিরকম হবে জানি না, যদি দিঘার মত খুব ভিড় হয় তাহলে হতাশ হব, এর ওপর তো সকাল থেকে কোন কিছুই আমাদের ইচ্ছা মত হয়নি ! রাস্তার দুপাশে শুধু গাছপালা সবুজ আর সবুজ, যদি লেখিকা হতাম তাহলে হলফ করে বলতে পারি, দু একটা কবিতা কিমবা উপন্যাস না হোক, একটা ছোটগল্প হাত দিয়ে বেরিয়ে আসতই। হঠাৎ করে সমুদ্রের হালকা গর্জন কানে এলো।
ফ্রেশ হবার পর খাওয়া দাওয়া সারলাম সবাই মিলে। কিছুক্ষণ আড্ডা চলল। একটা টপিকেই কথা চলছিল, টাকা খরচ হয় হোক, সমুদ্র হতাশ না করলেই ভালো। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে, ৩:৩০ টের দিকে টোটো নিয়ে বেরলাম সমুদ্রের খোঁজে। বেশ খানিকটা আশঙ্কা নিয়ে যাচ্ছি। কতদূরে যেতে হবে জানি না, জায়গাটা কিরকম হবে জানি না, যদি দিঘার মত খুব ভিড় হয় তাহলে হতাশ হব, এর ওপর তো সকাল থেকে কোন কিছুই আমাদের ইচ্ছা মত হয়নি ! রাস্তার দুপাশে শুধু গাছপালা সবুজ আর সবুজ, যদি লেখিকা হতাম তাহলে হলফ করে বলতে পারি, দু একটা কবিতা কিমবা উপন্যাস না হোক, একটা ছোটগল্প হাত দিয়ে বেরিয়ে আসতই। হঠাৎ করে সমুদ্রের হালকা গর্জন কানে এলো।
সমুদ্র আমাদের হতাশ করেনি। বরং যতটা ভালো লাগবে
ভেবেছিলাম তার থেকে অনেকগুণ ভালো লাগতে শুরু করলো। শরীর, মনের ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। তখন মনে হল পয়সা উশূল। লোকজন খুব কম, দোকান পাঠও খুব বেশী নেই, দৃষ্টি যতদূর যায় শুধু সমুদ্র
আর সমুদ্র। সে এক অন্য অনুভুতি। মন তখন গড়ের মাঠ। বাকিরা সবাই সমুদ্রে নেমে গেল। লাফালাফি ঝাঁপাঝাঁপি শুরু করেদিল। আর আমি ওদের ছবি তুলতে থাকলাম। সমুদ্র দেখতে ভালো লাগে, কিন্তু সমুদ্রে নামতে ভয় হয়। ওই পায়ে একটু ঢেউ এসে লাগলো, ওই পর্যন্তই।
প্রায় ঘণ্টা দুই ঝাঁপাঝাঁপির পর, সবাই মিলে
এসে বসলাম দোকানের সামনে করা চালাতে। প্রতিটা দোকানের সামনের কিছুটা অংশ বাঁশ আর খড় বা ওই জাতীয় কিছু
দিয়ে একটা চালা মত করা। সেখানে কিছু চেয়ার, টেবিল,দোলনা, পাতা আছে। দোকানগুলোতে বেশির ভাগই স্নাক্স জাতীয় খাবার।তবে ওদের বলে দিলে কাঁকড়া বা বন মুরগী (জানি না ওটা আসলে বন মুরগী কিনা) রান্না করে দেয়।
সবাই ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম, তাই বেশীক্ষণ আর থাকা হল না সমুদ্রে। রিসোর্ট ফিরে এলাম। রাতের খাবার শেষ করে সবাই মিলে আড্ডা শুরু হল। আড্ডাতে মেমোরি গেম, গানের অন্তাক্ষরী ছাড়াও ছিল বিয়ার, সিগারেট (যারা খাবে
তাদের জন্য)। রাত্তির দুটো
পর্যন্ত চলল আড্ডা। তারপর ঠিক হল পরদিন ভোরে (সকাল পাঁচটায়) উঠে সূর্যোদয় দেখতে
যাবার।
ভেবে ছিলাম ওই সকালে কেউ হয়ত উঠবে না। আমাকে ভুল প্রমাণ করে আরও দুজন রেডি। হালকা হালকা বৃষ্টি পড়ছে। ঠিক হল হেঁটে হেঁটে যাবার। রাস্তার বেশ খানিকটা এগিয়ে দেখি ডান দিকে একটা সরু রাস্তা চলে গেছে আর হালকা ঢেউয়ে আওয়াজ আসছে ওই দিক থেকে। ওই সকালে আমরা ছাড়া আর কোন প্রাণী দেখা যাছে না। আমরা বলতে, দুজন মেয়ে আর একজন ছেলে। বার বার ভাবছি ওই রাস্তায় যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা! তারপর মনে হল “ডর কে আগে জিত হ্যাঁয়”। তাই সুযোগটা নেয়া যাক।
রাস্তা দেখে মনে হচ্ছিল লোকজনের যাতায়াত আছে। কিন্তু সমস্যা হল কোন ধরনের লোকজন যাতায়াত করে? ভালো না খারাপ? চরৈবেতি মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চললাম। চারিদিকে বড় বড় নাম না জানা গাছ তাকিয়ে আছে। কিছু লতা জাতীয় গাছ এমন ভাবে পেঁচিয়ে আছে দেখতে সাপের মত লাগছে। ছোট বেলার দৈত্য দানবরা মনের মধ্যে গণ্ডগোল শুরু করেছে। যত এগোচ্ছি সমুদ্রের গর্জন আরও বেশী স্পষ্ট হচ্ছে। যদিও জঙ্গল অত বেশী ঘন ছিল না, তবুও একটা ভয়ংকর রাক্ষস পুরীর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
মনে সাহস আনার জন্য হালকা হালকা কথাবার্তা চলছে নিজেদের সাথে, যেন কিছুই হয়নি। এইরকম পরিবেশে শুনতে পেলাম আর একটা পায়ের আওয়াজ, সামনে থেকে আসছে। তখনো বুঝতে পারচ্ছিনা কি করবো! এগিয়ে যাচ্ছি। এরপর আর একটা সাইকেলের ক্যাঁচ কোঁচ আওয়াজ। আমাদেরকে দেখতে দেখতে পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। ভাবলাম এবার বুঝি অন্যদের ডেকে আনবে! সামনে একজন মহিলার সাথে দেখা। সমুদ্র আরও কত দূরে জিজ্ঞাসা করাতে বলল, “এই তো বাবু সামনে”। প্রান ফিরে পেলাম! একটা শর্ট কাট রাস্তা আবিষ্কার করা গেল।
ভেবে ছিলাম ওই সকালে কেউ হয়ত উঠবে না। আমাকে ভুল প্রমাণ করে আরও দুজন রেডি। হালকা হালকা বৃষ্টি পড়ছে। ঠিক হল হেঁটে হেঁটে যাবার। রাস্তার বেশ খানিকটা এগিয়ে দেখি ডান দিকে একটা সরু রাস্তা চলে গেছে আর হালকা ঢেউয়ে আওয়াজ আসছে ওই দিক থেকে। ওই সকালে আমরা ছাড়া আর কোন প্রাণী দেখা যাছে না। আমরা বলতে, দুজন মেয়ে আর একজন ছেলে। বার বার ভাবছি ওই রাস্তায় যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা! তারপর মনে হল “ডর কে আগে জিত হ্যাঁয়”। তাই সুযোগটা নেয়া যাক।
রাস্তা দেখে মনে হচ্ছিল লোকজনের যাতায়াত আছে। কিন্তু সমস্যা হল কোন ধরনের লোকজন যাতায়াত করে? ভালো না খারাপ? চরৈবেতি মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চললাম। চারিদিকে বড় বড় নাম না জানা গাছ তাকিয়ে আছে। কিছু লতা জাতীয় গাছ এমন ভাবে পেঁচিয়ে আছে দেখতে সাপের মত লাগছে। ছোট বেলার দৈত্য দানবরা মনের মধ্যে গণ্ডগোল শুরু করেছে। যত এগোচ্ছি সমুদ্রের গর্জন আরও বেশী স্পষ্ট হচ্ছে। যদিও জঙ্গল অত বেশী ঘন ছিল না, তবুও একটা ভয়ংকর রাক্ষস পুরীর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
মনে সাহস আনার জন্য হালকা হালকা কথাবার্তা চলছে নিজেদের সাথে, যেন কিছুই হয়নি। এইরকম পরিবেশে শুনতে পেলাম আর একটা পায়ের আওয়াজ, সামনে থেকে আসছে। তখনো বুঝতে পারচ্ছিনা কি করবো! এগিয়ে যাচ্ছি। এরপর আর একটা সাইকেলের ক্যাঁচ কোঁচ আওয়াজ। আমাদেরকে দেখতে দেখতে পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। ভাবলাম এবার বুঝি অন্যদের ডেকে আনবে! সামনে একজন মহিলার সাথে দেখা। সমুদ্র আরও কত দূরে জিজ্ঞাসা করাতে বলল, “এই তো বাবু সামনে”। প্রান ফিরে পেলাম! একটা শর্ট কাট রাস্তা আবিষ্কার করা গেল।
খুব তাড়াতাড়ি সমুদ্রে পৌঁছালাম। চারিদিক ফাঁকা। একটা দুটো দোকান তখন সবে খুলতে
শুরু করেছে। সূর্যোদয় আর দেখা হল না কারণ সূর্য
অনেক আগেই উদয় হয়ে গেছে। আকাশের এক দিকে খুব কালো মেঘ আর একদিকে সাদা মেঘ, নীল
আকাশ। মাঝে মাঝে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। সামনে দিগন্ত বিস্তৃত জল রাশি।
জনমানব শূন্য এলাকা। এক মায়াবী পরিবেশ।
বালি আর পলির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎই নিজেকে খুব একা মনে হল। এত বড় আকাশ আগে কখনো দেখিনি। এত ঘন কালো মেঘ, কি ভয়ংকর! সমুদ্রের হুংকার তখন দু কান ছাপিয়ে যাচ্ছে। শরীরে কাঁটা দিচ্ছে। নিজেকে খুব ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে! হঠাৎ নিজেকে প্রশ্ন করে বসলাম, আমি কে? নিজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন শুরু হল। মাথা পুরো ঘেঁটে যাচ্ছে! ভীষণ অস্থির লাগছে! হঠাৎ কানে এল “চল, সামনের দিকে”। সম্বিৎ ফিরে পেলাম। দেখলাম আমার বন্ধুরা।
মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ল। আবার নীল আকাশ! সমুদ্রে তখন দু একজন লোক নেমেছে। মাছ ধরছে মনে হল। বৃষ্টির জন্য আমরা একটা চালাতে গিয়ে বসলাম। দেখলাম ওরা অনেক ঝিনুক কুড়িয়েছে। বলল মালা গাঁথবে। আমরা চা বিস্কুট খাচ্ছি, গল্প করছি, লোক সংখ্যা বাড়ছে। সামনে দিয়ে একটা গরুর পাল চলে গেল। বড়, মাঝারি, ছোট সবরকম মাপের। চারিদিকে লাল কাঁকড়া ঘুরছে আর পায়ের শব্দ পেলেই লুকিয়ে পড়ছে বালির ভিতর।
বালি আর পলির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎই নিজেকে খুব একা মনে হল। এত বড় আকাশ আগে কখনো দেখিনি। এত ঘন কালো মেঘ, কি ভয়ংকর! সমুদ্রের হুংকার তখন দু কান ছাপিয়ে যাচ্ছে। শরীরে কাঁটা দিচ্ছে। নিজেকে খুব ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে! হঠাৎ নিজেকে প্রশ্ন করে বসলাম, আমি কে? নিজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন শুরু হল। মাথা পুরো ঘেঁটে যাচ্ছে! ভীষণ অস্থির লাগছে! হঠাৎ কানে এল “চল, সামনের দিকে”। সম্বিৎ ফিরে পেলাম। দেখলাম আমার বন্ধুরা।
মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ল। আবার নীল আকাশ! সমুদ্রে তখন দু একজন লোক নেমেছে। মাছ ধরছে মনে হল। বৃষ্টির জন্য আমরা একটা চালাতে গিয়ে বসলাম। দেখলাম ওরা অনেক ঝিনুক কুড়িয়েছে। বলল মালা গাঁথবে। আমরা চা বিস্কুট খাচ্ছি, গল্প করছি, লোক সংখ্যা বাড়ছে। সামনে দিয়ে একটা গরুর পাল চলে গেল। বড়, মাঝারি, ছোট সবরকম মাপের। চারিদিকে লাল কাঁকড়া ঘুরছে আর পায়ের শব্দ পেলেই লুকিয়ে পড়ছে বালির ভিতর।
তখন সকাল নটা কি সাড়ে নটা হবে, শুনতে পেলাম জোয়ার আসছে। সমুদ্রে জোয়ার কোনদিন
দেখিনি। খুব মজায় আছি। দেখলাম সমুদ্র আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে ক্রমশ, আমাদের মধ্যে
একজন বলল জোয়ার আসার আগেই আমাদের ডাঙ্গাতে পৌঁছাতে হবে। আমরা তখন সমুদ্রের ঢেউের সাথে
খেলতে খেলতে হাঁটছিলাম। সমুদ্রের এত জলোচ্ছ্বাস আর এত ভয়ংকর রুপ আমি প্রথম দেখছি, সমুদ্র
ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। চেনা সমুদ্র কেমন অচেনা লাগছে। ভিডিও রেকর্ড করতে
থাকলাম। কিন্তু বেশীক্ষণ না,ভয়ে জল ছেড়ে ডাঙ্গায় উঠে এলাম। তাজপুর আসাটা সার্থক
মনে হচ্ছিল।
যে পথে আমরা এসেছিলাম ওই পথ ধরার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, দেখি সমুদ্র আমাদের পথের বাধা হয়ে আছে। যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ ওই পথ সমুদ্রের ঢেউ এর আঘাতে ক্রমশ ভেঙ্গে যাচ্ছে। চারিদিকে গাছের গুঁড়ি ইতস্তত ছড়ানো। আমরা তিন জন ছাড়া আর কোন মানুষ দেখা যাচ্ছে না। সামনে কাঁটা তারের বেরা দিয়ে কিছুটা জায়গা ঘেরা। একদিকে সমুদ্রের হুংকার আর একদিকে বড় বড় গাছেদের নিজেদের মধ্যে কোলাহল। খট খট, শন শন শব্দ করছে আমাদের কানে। হয়ত আমাদের নিয়েই কিছু বলছে! এদিকে পিছনে ফেরারও পথ নেই, এর মধ্যে দিয়েই যেতে হবে আমাদের।
আমরা ঠিক করলাম যখন সমুদ্রের ঢেউ ফিরে যাবে তখন আমরা সমুদ্রে নেমে কিছুটা এগিয়ে যাবো, এছাড়া আর কোন পথ নেই। তাই করলাম। তখন এই ভয়ংকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মত মানসিকতা আর নেই, কিভাবে ফিরব এটাই ভাবছি। বেঁচে ফিরে না আসার আশঙ্কা কয়েকবার হয়েছিল মনে। সকালে যে দোকানটি দেখেছিলাম সেটা ভেঙ্গে গেছে, শুধু চালাটা অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছে। শুনেছি, সমুদ্র কিছু নেয় না। সব ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু যাদের দোকান ভাঙল, মানসিক এবং অর্থনৈতিক যে ক্ষতি হল, সেটা সমুদ্র কিভাবে ফিরিয়ে দেবে?
এর মধ্যেই দেখি কিছু লোক ওই জলে লাফালাফি করছে। অসীম সাহস ওদের। বাকি বন্ধুরা ফোন করে কোথায় আছি জানতে চাইল। ওরা যেদিকটায় আছে সেখানে পুলিশ সতর্ক করছে সমুদ্র থেকে উঠে যাবার জন্য। তাই ওরা রিসোর্টে ফিরে যাচ্ছে। বললাম আমরাও ফিরে যাচ্ছি। বহুদিন পর নাকি এরকম জোয়ার এসেছিল। হয়ত আমাদেরই জন্য।
যে পথে আমরা এসেছিলাম ওই পথ ধরার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, দেখি সমুদ্র আমাদের পথের বাধা হয়ে আছে। যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ ওই পথ সমুদ্রের ঢেউ এর আঘাতে ক্রমশ ভেঙ্গে যাচ্ছে। চারিদিকে গাছের গুঁড়ি ইতস্তত ছড়ানো। আমরা তিন জন ছাড়া আর কোন মানুষ দেখা যাচ্ছে না। সামনে কাঁটা তারের বেরা দিয়ে কিছুটা জায়গা ঘেরা। একদিকে সমুদ্রের হুংকার আর একদিকে বড় বড় গাছেদের নিজেদের মধ্যে কোলাহল। খট খট, শন শন শব্দ করছে আমাদের কানে। হয়ত আমাদের নিয়েই কিছু বলছে! এদিকে পিছনে ফেরারও পথ নেই, এর মধ্যে দিয়েই যেতে হবে আমাদের।
আমরা ঠিক করলাম যখন সমুদ্রের ঢেউ ফিরে যাবে তখন আমরা সমুদ্রে নেমে কিছুটা এগিয়ে যাবো, এছাড়া আর কোন পথ নেই। তাই করলাম। তখন এই ভয়ংকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মত মানসিকতা আর নেই, কিভাবে ফিরব এটাই ভাবছি। বেঁচে ফিরে না আসার আশঙ্কা কয়েকবার হয়েছিল মনে। সকালে যে দোকানটি দেখেছিলাম সেটা ভেঙ্গে গেছে, শুধু চালাটা অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছে। শুনেছি, সমুদ্র কিছু নেয় না। সব ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু যাদের দোকান ভাঙল, মানসিক এবং অর্থনৈতিক যে ক্ষতি হল, সেটা সমুদ্র কিভাবে ফিরিয়ে দেবে?
এর মধ্যেই দেখি কিছু লোক ওই জলে লাফালাফি করছে। অসীম সাহস ওদের। বাকি বন্ধুরা ফোন করে কোথায় আছি জানতে চাইল। ওরা যেদিকটায় আছে সেখানে পুলিশ সতর্ক করছে সমুদ্র থেকে উঠে যাবার জন্য। তাই ওরা রিসোর্টে ফিরে যাচ্ছে। বললাম আমরাও ফিরে যাচ্ছি। বহুদিন পর নাকি এরকম জোয়ার এসেছিল। হয়ত আমাদেরই জন্য।
বিকালে, আমাদের আবিষ্কার করা রাস্তা ধরে সমুদ্রে পৌঁছালাম। একটু ঘোরাঘুরি করে সূর্যের
অস্ত যাওয়া দেখলাম। একটা দোকানে গিয়ে কাঁকড়া, বন মুরগী আর রুটির অর্ডার দেয়া হল। আগের
দিনের তুলনায় লোকজনের ভিড় খুব কম। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, সবাই এরকম শনিবার আসে আর রবিবার চলে যায়। সপ্তাহের বাকি
দিনগুলো এই রকম ফাঁকাই থাকে। বেশ ফাঁকায়
ফাঁকায় হৈ চই করে সন্ধ্যে টা কেটে গেল।
কাঁকড়ার ঝাল, মুরগী কষা আর রুটি। দারুন দারুন! এতটা ভালো লাগলো যে পরের বার এখানে এসেই এগুলো খাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেললাম। একজন তো আবার রেসেপি জেনে নিল। তখন রাত্তির দশটা আবার জোয়ার আসছে সমুদ্রে, জল বাড়ছে, কিছু লোক পাগলামি শুরু করেছে। একজন তো সমুদ্র থেকে উঠবেই না ঠিক করেছে। তাকে সবাই মিলে বোঝাচ্ছে। এই ভাবেই দুর্ঘটনা ঘটে। পরের দিন সকালে আমাদের কলকাতা ফিরতে হবে তাই আমার ফিরে এলাম রিসোর্টে। ঘণ্টা খানেক আড্ডা দিয়ে আবার একদিন এখানে ঘুরতে আসার প্ল্যান করে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকালে আবার সেই ব্যাস্ত জীবন শুরু হল।
কাঁকড়ার ঝাল, মুরগী কষা আর রুটি। দারুন দারুন! এতটা ভালো লাগলো যে পরের বার এখানে এসেই এগুলো খাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেললাম। একজন তো আবার রেসেপি জেনে নিল। তখন রাত্তির দশটা আবার জোয়ার আসছে সমুদ্রে, জল বাড়ছে, কিছু লোক পাগলামি শুরু করেছে। একজন তো সমুদ্র থেকে উঠবেই না ঠিক করেছে। তাকে সবাই মিলে বোঝাচ্ছে। এই ভাবেই দুর্ঘটনা ঘটে। পরের দিন সকালে আমাদের কলকাতা ফিরতে হবে তাই আমার ফিরে এলাম রিসোর্টে। ঘণ্টা খানেক আড্ডা দিয়ে আবার একদিন এখানে ঘুরতে আসার প্ল্যান করে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকালে আবার সেই ব্যাস্ত জীবন শুরু হল।
আর কোনদিন এই টিমের সাথে আমার তাজপুর যাওয়া হয়নি, হবেও না। কারণ দুজন চাকরি ছেড়ে অন্য জায়গায় চাকরি নিয়ে চলে গেছে, দুজনের সাথে ভুল বোঝা বুঝির জন্য আর কথা হয়না,
আর বাকি আমারা দুজনে যাবার মত ইচ্ছে প্রকাশও করিনি কোনদিন। তবে ওই স্মৃতি কোনদিন ভুলবো না।
প্রসঙ্গত বলি, কেউ
যদি নির্জন সমুদ্রের ধার খুজচ্ছেন বেড়ানোর জন্য কিংবা তিন চার জন বন্ধু
মিলে খুব মজা করবো সমুদ্রে অথবা বান্ধবী বা বন্ধুর সাথে এক দুদিন একটা শান্ত পরিবেশে
বেড়াবো ভাবেন ,তাদের জন্য তাজপুর আদর্শ জায়গা। সপ্তাহের মাঝামাঝি গেলে আরও নির্জন পরিবেশ পেতে পারেন। অবশ্যই সমুদ্রের কাছাকাছি কোন হোটেলে থাকার চেষ্টা করবেন। তাহলে অনেক রাত্রি পর্যন্ত থাকা যাবে আর রাত্রে সমুদ্রে জোয়ার
দেখতে পাবেন। বর্ষাকালে মানে জুলাই এর দিকে গেলে উপরি পাওনা হিসাবে হটাৎ
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি আর মেঘ ও সূর্যের লুকোচুরি খেলা দেখতে পাবেন। ওখানের
দোকানগুলোতেই কাঁকড়া আর দেশি মুরগী পেতে পারেন। যদি বাজার করার ইচ্ছে থাকে তাহলে
মাছ বাজার করে এনে দোকানগুলোতে বললে ওরা রান্না করে দেয়। এতে খরচটা একটু কম হয় আর
আপনি পছন্দের মত মাছ বা যেটা আনবেন সেটা খেতে পাবেন।
দিঘা আর মন্দারমনির মাঝামাঝি একটা জায়গা তাজপুর, পূর্ব মেদিনীপুর,পশ্চিমবঙ্গ।
কলকাতা থেকে প্রায় ১৭২.৯ কিমি ভায়া এনএইচ ১৬ আর এনএইচ ১১৬বি। হাওড়া-দিঘা এক্সপ্রেসে গেলে
রামনগর স্টেশন নামাই ভালো। বাসে গেলে হাওড়া-দিঘা বাস ভায়া বালিসাই। তাজপুরের
আশেপাশে প্রায় ১৪০০ একর জুরে মাছের চাষ হয়। তাই এখানে অনেক মাছের ভেড়ী দেখতে পাওয়া
যায়। অতএব দুদিন ছুটি নিয়ে একবার বেড়িয়ে আসুন তাজপুর।
5 মন্তব্যসমূহ
Beautiful pictures . Will visit tajpur someday soon
উত্তরমুছুনFollow me at https://describes.in
Porar por Tajpur khub jete ichhe hochhe.. Tobe eto ta sahos hobe kina bhabchi.. Good carry on👍
উত্তরমুছুনKhub sundor futiya tulechis.gd..
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনhttps://citytourkolkata.com/digha-jagannath-temple-tour/
উত্তরমুছুনআপনার মূল্যবান মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করে !