Ticker

6/recent/ticker-posts

হীরক রাজার দেশে ও জয়চণ্ডী পাহাড় ভ্রমণ আর কিছু অজানা তথ্য


আজকে, আমরা এমন একটা জায়গায় যাবো যেখানে আপনি আপনার শৈশব খুঁজে পাবেন। বলতে চাইছি, শৈশবের স্মৃতি চারণ করতে বাধ্য হবেন। উপরি পাওনা হিসাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার ব্যাপার তো আছেই।

সত্যজিৎ রায় কে চেনেন না এমন বাঙালি পাওয়া মুশকিল। আর তার অমর সৃষ্টি “হীরক রাজার দেশে” দেখেননি এমন বাঙালি পাওয়াও মুশকিল। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কোন জায়গায় যাবো আমরা? আজকের গন্তব্য স্থান হল হীরক রাজার দেশ।আরও বড় করে বলতে গেলে, জয়চণ্ডী পাহাড়।

উদয়ন পণ্ডিতের সাথে গুপী বাঘার প্রথম সাক্ষাতের দৃশ্য বা গুপী বাঘার ভোজনের দৃশ্য, সবকিছু মনে পড়ে যাবে এই পাহাড় শৃঙ্খলায় আসলে। সত্যজিৎ রায় তাঁর হীরক রাজার দেশেসিনেমার একটা বড় অংশের শুটিং করেন এখানেই। 

পলাশ,শাল,মহুয়ার ঘেরা লালমাটির শহর পুরুলিয়া জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র জয়চণ্ডী পাহাড়।আদ্রা শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার আর রঘুনাথপুর শহর থেকে মাত্র ২কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ৫০৯ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট জয়চণ্ডী পাহাড় শৃঙ্খলা।জয়চণ্ডী পাহাড় বেশ কয়েকটি পাহাড়ের সমণ্বয়ে গঠিত।যাদের পোশাকি নাম যথাক্রমে যোগীঢাল, চণ্ডী, ঘড়ি, সিজানো, রামসীতা প্রভৃতি।


চিত্র:রামসীতা পাহাড়


স্থানীয়ের মুখে যোগীঢাল(মতান্তরে জগাঢালী) পাহাড়ের নাম যোগীঢাল হবার ইতিহাস জানা গেল। ব্রিটিশ শাসনকালে, ব্রিটিশরা নাকি কুখ্যাত সব অপরাধীদের শাস্তি হিসাবে ওই পাহাড় থেকে ফেলে মেরে ফেলত। জগাঢালী এক নামকরা ডাকাত ছিল। মৃত্যুকালে তার অন্তিম ইচ্ছে জানতে চাইলে জগাঢালী  জানায় যে সে ইংরেজ দারোগার পা ধরে প্রণাম করতে চায়। অনুমতি পেয়ে সে ওই ইংরেজ দারগার দু পা ধরে টানে এবং দুজনেই পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায়।তারপর থেকে ব্রিটিশরা ওই শাস্তির প্রথা তুলে দেয়। আর ওই পাহাড়ের নাম হয় যোগীঢাল বা জগাঢালী।


চিত্র: যোগীঢাল(মতান্তরে জগাঢালী) পাহাড়

একমাত্র জয়চণ্ডী পাহাড়েই ওঠার জন্য কংক্রিটের সিঁড়ি নির্মাণ করা আছে। সিঁড়ির ওঠার মুখেই রয়েছে অর্ধচন্দ্রাকৃতি তোরণ।তোরণে লেখা আছে শ্রী জয়চন্ডী মাতা ও শ্রী শ্রী বজরংবলীজির মন্দির।সিঁড়ি দিয়ে পাহাড়ে উঠতে উঠতে আপনার চোখে পড়বে একটি ওয়াচ টাওয়ার বর্তমানে যা ধংস্বাবশেষে পরিণত হয়েছে।ইচ্ছে হলে ওয়াচ টাওয়ারটি ঘুরেও দেখতে পারেন। শোনা যায় কাশিপুর রাজার সৈন্যরা এখান থেকে বহুদূর নজর রাখতেন।


চিত্র:অর্ধচন্দ্রাকৃতি তোরণ


চিত্র:শ্রী জয়চন্ডী মাতা মন্দির

চিত্র:ওয়াচ টাওয়ার
চিত্র ঋণ:bongreader.in 

জয়চণ্ডী পাহাড়ে উঠতে প্রায় ৫০৩ টি সিঁড়ি অতিক্রম করতে হবে।সিঁড়ির সংখ্যা দেখে মনে ক্লান্তি আসলেও, বাজি ধরে বলা যেতে পারে যে, পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেই আপনার এই ক্লান্তি এক মুহূর্তে দূর হয়ে যাবে। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে একবার নিচের দিকে তাকালে দেখা যায় এক অসাধারন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।একদিকে শহরের ব্যস্ত নাগরিক জীবন অন্যদিকে আদিবাসী পল্লীর নিজস্ব ছবি।আরো দূরে ধূ ধূ মাঠের বিক্ষিপ্ত সবুজবর্ণ মনে এনে দেবে মায়াবী পরশ।


চিত্র:জয়চন্ডী পাহাড়ের ওপর থেকে রঘুনাথপুর অঞ্চল


পাহাড়ের উপরে রয়েছে শ্রী শ্রী বজরংবলীর একচূড়া মন্দির আর তারও উপর রয়েছে জয়চন্ডী মাতার পঞ্চরত্ন মন্দির।গর্ভগৃহে রয়েছেন শ্বেতপাথরের নির্মিত অষ্টভুজা। সিংহবাহিনী শ্বেতসুভ্রা মা জয়চণ্ডী।মায়ের দক্ষিণ দিকে রয়েছে শিবলিঙ্গ বাম দিকে রয়েছে শালগ্রাম শিলা।মন্দিরের পাশেই রয়েছে মানত বৃক্ষ।গাছপালা ঘেরা পাহাড়ের সৌন্দর্য,জলাশয় ও শ্রী শ্রী জয়চণ্ডী মাতার মন্দির স্থানটিকে একটি বিশেষ রূপে সাজিয়ে তুলেছে।


চিত্র:মানত বৃক্ষ










একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ