আজকে
১০ই জুলাই। কলকাতায় আনলকডাউন এর পর আবার লকডাউন শুরু হয়েছে। এই বছরের মার্চের
শেষের দিকে (তারিখ মনে নেই), প্রথমে একদিন, পরে এক সপ্তাহ এবং তারপরে মাস দুয়েক বা
তিনেক মত লকডাউন চলার পর আনলকডাউন এর পর্যায় শুরু হল।
প্রথম পর্যায় ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পর আমাদের সরকার বুঝতে পারলেন, জনগণ ভীষণই বেয়াদপ। তাই আবার লকডাউন শুরু।
গতকাল বিকেল পাঁচটা থেকে বেশ খানিকটা কড়াকড়ি ভাবে লকডাউন শুরু হয়েছে। চলবে এক
সপ্তাহ ধরে। আমি এই বিতর্কে যেতে চাইছি না যে, কোরোনা সংক্রমণ রুখতে সরকার
কতটা ব্যর্থ বা সফল। আমি আমার কথা বলতে চাইছি। আমি কেমন আছি, কি করেছি এই লকডাউনে বা কি করবো আগামী
দিনগুলোতে। অবশ্য আমার কথা জেনে পাঠকদের যে বেশ কিছু সুবিধা বা লাভজনক কোন ব্যাপার
হবে তা কিন্তু না।
লকডাউন এর শুরুর দিকে বেশ খানিক খুশি
হয়েছিলাম। প্রথম কারণ অফিস যেতে হবে না। বাড়িতেই অফিস বসবে। দ্বিতীয় কারণ নিজের
সঙ্গে সারাক্ষণই থাকবো। এটা একটা অসম্ভব প্রাপ্তি। প্রথমেই বলি, আমি এমন একটা সংস্থায় কাজ করি, যেখানে, যদি সারাদিন মানে
২৪ ঘণ্টাই কাজ করি তাহলেও শুনতে হবে কাজ কম হচ্ছে। শুধু তাই না, পারিশ্রমিক হিসেবে শুধু মাত্র দেশ সেবা করছি
বা একজন সচেতন নাগরিকের তকমা পাবো। কোনরকম পকেট ভারী করার সরঞ্জাম পাবো না শুধুই
"ফিলিং গুড"। তাই সই! প্রথমের দিকটা এই " ফিলিং গুডেই " মন
ভরছিল। ষোলো ঘণ্টা ধরে কাজ চলছে। তবুও ক্লান্তি নেই। কিন্তু মাস দুই পর চোখে
জ্বালা, পেটে খিদে, মনের মধ্যে নিজেকে
খুঁজে না পাওয়া শুরু হল। শুধু কাজ কাজ আর কাজ।
স্বপ্নও দেখছি কাজ নিয়ে। অন্য কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে কাজের কথা ভাবতে শুরু করে
দিয়েছি খেয়াল নেই! বেশ সমস্যা শুরু হল নিজের মধ্যে! এই সব ভেবে ভেবে জ্বর চলে
এলো। অগত্যা ছুটি নিলাম দুদিন। কিন্তু হায়! এ কি রকমের ছুটি!! অর্ডার এলো
"রেস্ট নাও কিন্তু যদি কোন কাজ আসে একটু খেয়াল রেখো যদি কিছু কন্ট্রিবিউট
করতে পারো তো দেখো"। তাই ছুটি টাও অফিসের কাজের মধ্যেই কাটালাম।
মনের মধ্যে খচখচানি! দেখলাম, এই কাজ কাজ করে আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, কাউকেই কোন গুরুত্ব
দিই নি। কাজের দোহাই দিয়ে করো সাথেই যোগাযোগ রাখিনি। যার ফলে তারা আমার ওপর বেশ
রেগে গিয়ে আমার সাথে দূরত্ব তৈরি করছে। নাহ্, এই চক্রবুহ থেকে
বেরোতেই হবে। ভাবলাম একটু খোঁজ নিই বাকিদের। খোঁজ নিতে গিয়ে বেশ মজার তথ্য
বেরিয়ে এলো। বেশির ভাগ জন্ই তো ছুটি তে রয়েছে। মানে একেবারে হলিডে তে রয়েছে।
কেউ এত কাজের চাপ নিচ্ছে না। একদম মজায় রয়েছে। কেউ কেউ যারা আমার সহকর্মী হবার
পাশাপাশি শুভকামীও, তারা আমাকে সাজেশন দিতে থাকলো, এত কাজ করছিস কেনো? এত চাপ নিস না। কেউ তো এত চাপ নিচ্ছে না। ওহ্, জীবনে জীবন খুঁজে পেলাম! কি যে ভালো লাগতে
লাগলো! কিন্তু এতদিনের অভ্যেস! যাক একটু প্র্যাকটিস শুরু করলাম। সপ্তাহ দুয়েকের
মধ্যে একদম নিজের জায়গায় চলে এলাম। ইতিমধ্যে অফিস যাওয়াও শুরু হল। এখন আমিও বেশ
মজায় আছি। অল্প স্বল্প কাজ করছি। নিজের সাথে সময় কাটাচ্ছি।
এবার আসি
moral of the story তে। এই লকডাউন আমাকে কি শেখালো।
- তুমি যত কাজ করবে, তত কাজ বাড়বে। তাই অফিস জীবন আর ব্যাক্তিগত জীবন আলাদা করতে শিখতে হবে।
- নিজেকে অন্য ভাবে আবিষ্কার করলাম। আমি যে এতটা পরিশ্রম করতে পারি তা আমার জানা ছিল না। শুধু তাই না, কাজ করার ক্ষেত্রে আমি বেশ দক্ষতা অর্জন করেছি। কারণ সুপিরিয়র দের কাছ থেকে বেশ সাধুবাদ পেয়েছি।
- একটু চোখ কান খোলা রেখে কাজ করতে হবে। দেখতে হবে আমার চারপাশে যারা আছে তাদের পারফরম্যান্স কেমন। তারপর নিজের এফোর্ট টা দিতে হবে। মানে গাধার মত কাজ করলেই হবে না। একটু সজাগ হয়ে কাজ করতে হবে।
- যারা নিজের লোকজন, কাছের লোকজন তাদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে।
- চাপ সামলাবার ক্ষমতা একটু বেড়েছে।
- জীবন যুদ্ধে জয়ী হবার আত্মবিশ্বাস টা একটু বাড়াতে পেরেছি।
- কাজের সময় বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু শর্ট কাট রান্নাও শিখেছি।
আরও পড়ুন :
1 মন্তব্যসমূহ
This is truth.
উত্তরমুছুনআপনার মূল্যবান মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করে !